ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান
ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান এর জন্ম ১৯২৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার অর্ন্তগত মাঝগ্রামে। বৃটিশ আমলের পুলিশ বিভাগের ঝানু অফিসার ডেপুটি সুপারিনন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ পিতা মরহুম মোহাম্মদ শমসের আলী স ছিলেন কর্তব্যপরায়ন এবং স্বাধীনচেতা। মোহাম্মদ সুলতান যশোর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার আগেই মাকে হারান। স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মোহাম্মদ সুলতান স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।
মোহাম্মদ সুলতান কৈশোরেই 'ভারত ছাড়' বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে প্রথম আকৃষ্ট হন রাজনীতিতে। ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে ১৯৪৮ সালে রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলন এবং ছাত্র আন্দোলনে মোহাম্মদ সুলতান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫১ সালে যুবলীগে যোগ দেন এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। মোহাম্মদ সুলতান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কালো পতাকা উত্তোলনকারী ছাত্র। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভংগ না করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর যে ১১ জন সংগ্রামী ছাত্রনেতা ফজলুলহক হলের পুকুর পাড়ের সিঁড়িতে বসে রাত্রি ১টায় ১৪৪ ধারা ভাংগার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন তাদের অন্যতম।
রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে সাথে সাংস্কৃতিকআন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সুলতান বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল ছিলেন এবং আন্দোলনের ইতিহাসকে লিপিবদ্ধ করে রাখার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। ভাষা আন্দোলনের পর তিনি এমআর আক্তার মুকুলের অংশীদারিত্বে প্রধানত রাজনৈতিক উদ্দ্যেশে পুস্তক বিক্রয় কেন্দ্র 'পুথি পত্র' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক সংকলন 'একুশে ফেব্রুয়ারি' প্রকাশ করেন। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে সাহিত্যের মাধ্যমে ধরের রাখার ঐতিহাসিক দায়িত্ব তিনি পালন করেন। অবশ্য প্রকাশনার কিছুদিন পরেই মুসলিম লীগ সরকার 'একুশে ফেব্রুয়ারি' বইটি বাজেয়াপ্ত করেন।
১৯৮৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পঞ্চগড় জেলাবাসীকে কান্নার সাগরে ভাসিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ৩নং ওয়ার্ডের করিডোরে চিরতরে বিদায় নেন সর্বজন শ্রদ্বেয় ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিক, ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম
এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম পঞ্চগড় জেলার বোদা থানার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের মহাজন পাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে চল্লিশ এর দশকে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইমাজ উদ্দীন আহম্মেদ এবং মাতার নাম কবিজান নেছা। ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ ছাত্র লীগের তৎকালীন সময়ে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন ৬৬ ছয় দফা এবং সর্বোপরি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং একাধারে রাজশাহী বিভাগীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক এবং ডাকসুর সহ-সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসীন ছিলেন। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ৬নং সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে তেঁতুলিয়াকে মুক্তাঞ্চলের তীর্থভূমি হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করান। বঙ্গবন্ধুর ২য় বিপ্লব কর্মসূচীর ডাকে সাড়া দিয়ে বাকশালের ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক মনোনিত হন। এ ছাড়াও তিনি একাধিকবার জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ১ম আর্ন্তজাতিক সম্পাদক হিসেবে মূল্যবান দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে ২রা জুন মৃত্যুকালীন পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার কর্মসূচী বাস্তবায়নে নিয়োজিত ছিলেন।
কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ ১৯৩৮ সালে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম আহমেদ সাদাকাতুল বারি এবং মাতার নাম মরহুমা তৈয়বুন্নেসা। মোহাম্মদ ফরহাদ ১৯৫৩ সালে দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও গ্রাজুয়েশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৪ সালে প্রথম কারাবরণ করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জঙ্গী ছাত্র আন্দোলনে ও শিক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৬৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম কংগ্রেসে (সম্মেলন) কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর অন্যতম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। সি,পি,বি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর (মুক্তি বাহিনী) প্রধান সংগঠক ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি অন্যতম প্রধান সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ৫২’র বাংলা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এদেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS